প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ২১শে জুলাই প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন থেকে সরে দাঁড়ালেন এবং কমলা হ্যারিসকে পুর্ন সমর্থন দেন তার পিছনের অনেক গুলা রিজন এর মধ্যে একটা রিজন ছিল সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড । অনেকে হয়তো এই টার্মটা কোথাও না কোথায় দেখে থাকবেন “kamala is brat”
brat জিনিসটা কি তা বুঝার জন্য আগে একটু পিছনে দেখতে হবে ।
ইংলিশ তারকা শিল্পী Charlie XCX তার নতুন একটি পপ মিউজিক এলবাম রিলিজ করে জুনের ৭ তারিখ । এই এলবামটা এতই জনপ্রিয় হয় যে জেন জি এঁর মধ্যে নতুন একটা ট্রেন্ড শুরু হয় “Brat Summer” । একটা টিকটক ভিডিওতে চার্লি brat বলতে বুঝিয়েছেন “এমন একটি মেয়ে যে “কিছুটা অগোছালো,” “পার্টি করতে পছন্দ করে” “কখনও কিছু ওয়িয়ার্ড জিনিস করে” তবে সে “সৎ, স্পষ্টবাদী এবং কিছুটা অস্থির । পরবর্তীতে এটিকে কেন্দ্র করে অনেক গুলো টুইটার একাউন্ট থেকে meme গুলো ভাইরাল হতে থাকে” (নীচে দেখানো ভিডিওটি)।যারা কমলা হ্যারিসকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলে ।
যাই হোক তবে এই meme গুলো কমলা হ্যারিসকে আর বেশি তরুণ, এনার্জিটিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বাইডেন এর তুলনায় । যেখানে ডেমোক্রেট এর লিডারদের খুব একটা মুরুব্বি মুরুব্বি ভাব নিয়ে থাকতে দেখা যায় সেখানে মনে করা হচ্ছে কমলা হ্যারিসকে ভিন্ন কিছু যা তরুণদেরকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করে !!
তবে কি এই ব্র্যাট কমলা, বাইডেন এঁর ইসরায়েলকে অস্ত্র যোগান এবং ডিপ্লোমেটিক সাপোর্ট দেওয়া থেকে কি সরে দাঁড়াবেন ?
ইউএস Minnesota এঁর গভর্নর টিম ওয়ালজ অনেক আগে থেকেই ইসরায়েলকে অস্ত্র এবং ডিপলোমেটিক সহায়তা দেওয়া থেকে সরে আসার কথা বলে আসছেন বিগত অনেক দিন ধরেই । যা অনেক এঁর মনে আশার সঞ্চার করে । তবে বিষয়টি আর বেশি আশার সঞ্চার করে যখন কমলা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে চুজ করে ওয়ালজকে । সবার মনে একই প্রশ্ন ছিল আদও কি কমলা বাইডেন এর ইসরায়েল প্রীতি রক্ষা করবেন নাকি সেখান থেকে সরে আসবেন ?
সিএনএন এঁর একটি ইন্টারভিউতে সম্প্রীতি ডানা ব্যাশ তাকে জিজ্ঞেস করে যেহেতু ওয়ালজ তার পাশে আছেন সেক্ষেত্রে ইসরায়েল-গাজা ইস্যুতে যে সিজ ফায়ার এবং অস্ত্র যোগান বন্ধ করে তিনি কি ভিন্ন কিছু করবেন কিনা ? উত্তরে হ্যারিস বলেন “না এবং ক্লিয়ার করেন অস্ত্র যোগান ইস্যুতে US এর অবস্থান কোন চেইঞ্জ হবে না”
তবে হ্যারিস আর যোগ করেন ইসরায়েলিদের যেমন নিরাপত্তা এবং আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে ঠিক একই পরিমাণ অধিকার ফিলিস্তিনিদেরও আগে সম্মান এর সাথে বেঁচে থাকার । ঠিক একই ধরনের ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক ন্যাশেনাল কনভেনশনে যে “ফিলিস্তিনিরা নির্যাতিত তবে ইসরায়েলরো আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে ”
কমলা হ্যারিস এর এই উক্তি শুনা প্যালেস্টাইনিদের জন্য বেশ হতাশা জনক । কারণ তিনি স্বীকার করলেও গাজার অধিবাসীদের অনেক কস্টের মুখামুখি হচ্ছে কিন্তু তিনি তিনি স্পষ্টভাবে স্বীকার করতে রাজি নন এঁর পিছনে ইসরায়েলের সরাসরি হাত রয়েছে ।। তিনি ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণ হিসেবে হামাসের আক্রমণকে দেখালেও আদতে গাজার বর্তমান সংকটের মুল কারণ এডরেস করেন নি ।
Matt Duss এর মত আর ক্রিটিকস মনে করেন যে ইসরায়েল এঁর এই আগ্রাসনের পিছনে ডিজেল হিসেবে কাজ করলে আমেরিকার এই অস্ত্র সহায়তা , তবে হ্যারিস তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে আগ্রহী নন ।
অবশ্য এই বিষয় নিয়ে হ্যারিসকে নিজে এবং তার দল অনেক চাপের মধ্যে রয়েছেন । সম্প্রীতি শিকাগোতে হওয়া ডেমোক্রেটিক ন্যাশেনাল কনভ্যানশনে প্যালেস্টাইন-আমেরিকান কোন মুখপাত্রকে কোন কথা বলতে দেওয়া হয়নি । তবে উক্ত কনভেনশনে মোট ২৩০ জন ডেলিগেট তার মধ্যে ৩০ জন বাদে সবাই কমলা হ্যারিস এর পক্ষের ডেলিগেট এমনকি তারাও শর্তসাপেক্ষে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার পক্ষে ।
তবে এই ইস্যুতে স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায় কমলা ইসরায়েল এর বিপক্ষে সাহসি পদক্ষেপ নিতে ভীত কিংবা তিনি উভয় দিকে ব্যালেন্স করতে চান ।
অস্ত্র সহায়তা সম্পর্কে আইন কি বলে ?
অস্ত্র যোগান দেওয়া বন্ধ করা ইস্যুতে অনেক এডভোকেট Leahy Law 1997 কে ইন্ডিকেট করছেন । উক্ত আইন অনুযায়ী “এমন কোন অস্ত্র সহায়তা দেওয়া যাবে না যা মাধ্যমে মানবঅধিকার ক্ষুণ্ণ হয় ” । তবে ইসরায়েল এঁর বিরুদ্ধে মানবতার বিরুধী কর্মকাণ্ডের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় । যেমন সিভিলিয়ানদের উপর বোমা হামলা , হাসপাতাল গুড়িয়ে দেওয়া , ত্রাণ সাহায্য আটকে রাখা এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদেরর উপর অমানবিক অত্যাচার এর স্পষ্ট প্রমাণ আছে যা সরাসরি হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট করে । এমনকি ইসরায়েল লিডার ইন্টারন্যাশেনাল ক্রিমিনাল কোর্ট এ সরাসরি মানবতা বিরুধী এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে গনহত্যাকারী হিসেবে মামলা দায়ের করা হয় ।
আমেরিকার জনগন কি চায় ?
YouGov গত জুনে একটি অনলাইনে ভোট পাবলিশ করে শর্তসাপেক্ষে অস্ত্র সহায়তার পক্ষে । ভোট দানকারীর ৬১ শতাংশ মনে করেন অস্ত্র সহায়তা দেওয়া বন্ধ হোক আর ৭১ শতাংশ ডেমোক্রেট মনে করে যেকোন ধরনের মিলিটারি সহায়তা দেওয়া বন্ধ হোক । Matt Duss এর মত প্রগ্রেসিভ নেতারা মনে করেন এক্ষেত্রে কমলা হ্যারিসকে আর সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন যা এখনো কমলা হ্যারিস থেকে লক্ষ করা যায় নি ।
যেখানে অন্যান্য বিরোধী দলিয় নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এর শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করা যায় ইসরায়েল-গাজা ইস্যুতে সেখানে কমলা হ্যারিস এঁর অবস্থান অত্যান্ত নড়বড়ে ।কমলাকে এখনো ইসরায়েল-গাজা ইস্যুতে কোন পুর্নাঙ মেন্ডেট প্রস্তাব করতে পারেন নি । আগামী নির্বাচনে আদও কমলা হ্যারিস কি ট্রাম্প এঁর থেকে এগিয়ে থাকবেন নাকি ট্রাম্পই হচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ?